হেলাল হাফিজ (জন্মঃ ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। ওই গ্রন্থটির ১২টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। দেরীতে হলেও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।
রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬
হেলাল হাফিজ
“ আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;
ইস্! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই ”
হেলাল হাফিজ
“ তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?
চিনি, খুব জানি
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে দিলাম না – ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার ”
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
“সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো, আসাদুল্লাহ সাহেবের নীলপদ্ম থিউরি ঠিক আছে. এই তরুণী তার সমস্ত নীলপদ্ম হিমু নামের এক ছেলের হাতে তুলে দিয়ে তীব্র কষ্ট ও যন্ত্রণার ভেতর বাস করছে। এই যন্ত্রণা, এই কষ্ট থেকে তার মুক্তি নেই.”
― Humayun Ahmed, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
― Humayun Ahmed, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
ময়ূরাক্ষী
“আমার সমস্যার কথা রুপাকে কি আমি বলতে পারি? আমি কি বলতে পারি - আমার বাবার স্বপ্ন সফল করার জন্য সারাদিন আমি পথে পথে ঘুরি। মহাপুরুষ হবার সাধনা করি. যখন খুব ক্লান্তি অনভব করি তখন একটি নদীর স্বপ্ন দেখি। যে নদীর জল ছুয়ে ছুয়ে এক জন তরুনি ছুটে চলে যায়. এক বার শুধু থমকে দাড়িয়ে তাকায় আমার দিকে। তার চোখে গভীর মায়া ও গাঢ় বিষাদ। এই তরুনীটি আমার মা. আমার বাবা যাকে হত্যা করেছিলেন।
এই সব কথা রুপাকে বলার কোনো অর্থ হয় না. বরং কোনো-কোনো দিন তরঙ্গিনী স্টোর থেকে টেলিফোন করে বলি - রুপা, তুমি কি এক্ষুনি নীল রঙের একটা সারি পরে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশ ধরে নিচের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। একটুখানি দাড়াও। আমি তোমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে চলে যাব.
আমি জানি রুপা আমার কথা বিশাস করে না, তবুও যত্ন করে সারি পরে. চুল বাধে। চোখে কাজলের ছোয়া লাগিয়ে কার্নিশ ধরে দাড়ায়। সে অপেক্ষা করে. আমি কখনো যাই না.
আমাকে তো আর দশটা ছেলের মত হলে চলবে না. আমাকে হতে হবে অসাধরণ।আমি সারাদিন হাটি। আমার পথ শেষ হয় না. গন্তব্যহীন যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার তো কথাও নয়.”
― Humayun Ahmed, ময়ূরাক্ষী
এই সব কথা রুপাকে বলার কোনো অর্থ হয় না. বরং কোনো-কোনো দিন তরঙ্গিনী স্টোর থেকে টেলিফোন করে বলি - রুপা, তুমি কি এক্ষুনি নীল রঙের একটা সারি পরে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশ ধরে নিচের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। একটুখানি দাড়াও। আমি তোমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে চলে যাব.
আমি জানি রুপা আমার কথা বিশাস করে না, তবুও যত্ন করে সারি পরে. চুল বাধে। চোখে কাজলের ছোয়া লাগিয়ে কার্নিশ ধরে দাড়ায়। সে অপেক্ষা করে. আমি কখনো যাই না.
আমাকে তো আর দশটা ছেলের মত হলে চলবে না. আমাকে হতে হবে অসাধরণ।আমি সারাদিন হাটি। আমার পথ শেষ হয় না. গন্তব্যহীন যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার তো কথাও নয়.”
― Humayun Ahmed, ময়ূরাক্ষী
শ্রেষ্ঠ বাণী চিরন্তনী
“ভালোবাসা আর ঘৃণা আসলে একই জিনিস। একটি মুদ্রার এক পিঠে "ভালোবাসা" আরেক পিঠে লেখা ঘৃণা। প্রেমিক প্রেমিকার সামনে এই মুদ্রা মেঝেতে ঘুরতে থাকে। যাদের প্রেম যতো গভীর তাদের মুদ্রার ঘূর্ণন ততো বেশি। এক সময় ঘূর্ণন থেমে যায় মুদ্রা ধপ করে পড়ে যায়। তখন কারো কারোর ক্ষেত্রে দেখা যায় "ভালোবাসা" লেখা পিঠটা বের হয়েছে, কারো কারো ক্ষেত্রে ঘৃণা বের হয়েছে। কাজেই এই মুদ্রাটি যেন সবসময় ঘুরতে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণন কখনো থামানো যাবে না।”
― Humayun Ahmed, দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
― Humayun Ahmed, দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
শ্রেষ্ঠ বাণী চিরন্তনী
“শিকল দিয়ে কাউকেই বেঁধে রাখা হয় না । তারপরেও সব মানুষই কোনও - না - কোনও সময় অনুভব করে তার হাত - পায়ে কঠিন শিকল । শিকল ভাঙতে গিয়ে সংসার - বিরাগী গভীর রাতে গৃহত্যাগ করে । ভাবে ,মুক্তি পাওয়া গেল । দশতলা বাড়ির ছাদ থেকে গৃহী মানুষ লাফিয়ে পরে ফুটপাতে । এরা ক্ষণিকের জন্য শিকল ভাঙার তৃপ্তি পায় ।”
― Humayun Ahmed, মৃন্ময়ী
― Humayun Ahmed, মৃন্ময়ী
শ্রেষ্ঠ বাণী চিরন্তনী
“ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভাল।বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না।আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত বা ভালবাসাটা থাকে,শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়।”
― হুমাযূন আহমেদ, কোথাও কেউ নেই
― হুমাযূন আহমেদ, কোথাও কেউ নেই
আমাদের ছোট নদী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।
চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।
আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।
আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসব জেগে ওঠে পাড়া।।
মানুষ
– কাজী নজরুল ইসলাম

মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!”
মুনাজাত
– কাজী নজরুল ইসলাম
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।
যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।
ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।
নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।।
এবারই প্রথম তুমি
নির্মলেন্দু গুণ
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ
- নির্মলেন্দু গুণ
নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না
কেউ কোনোদিন।
এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, 'কী কইরা
পালবা আমারে,
তোমার কী আছে কিছু তেনা?'
সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু'হাতে বুকে পিষে
বলেছিল নেকাব্বর;
'আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত,
গতরে আত্তীর বল - আর কীডা চাস্ মাগী।'
'তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?'
আজ এই গোধুলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে
নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে।
তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস।
পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায়
সাজানো কদলীবন,'
যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায়
দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।
কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের?
ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে।
কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার।
বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ-
অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর।
এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর?
হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা-
কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো?
আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ,
মনে হলো হাবিয়া দোজখ - কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়?
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে,
অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন?
তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়?
নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব
ঘিরে আছে সাংবাদিক দল। কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে,
কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, - নেকাব্বর কিছুই বলে না।
সেই গল্পটা
পূর্ণেন্দু পত্রী
....................
আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি। শোনো। পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালোবেসেছিলো মেঘকে আর মেঘ কি ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা সে তো আগেই শুনেছো। সেদিন ছিলো পাহাড়টার জন্মদিন। পাহাড় মেঘকে বললে – আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে। মেঘ পাহাড়কে বললে – আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে। ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ। সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে পাহাড় ছিলো মেঘের ঢেউ-জলে। হঠাৎ, আকাশ জুড়ে বেজে উঠলো ঝড়ের জগঝম্প ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাই এর ভঙ্গিতে ছুটে এল এক ঝাঁক হাওয়া মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে – ওঠ্ ছুঁড়ি! তোর বিয়ে । এখনো শেষ হয়নি গল্পটা। বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেলো ঠিকই কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিন ভুলতে পারলনা। বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো পাহাড়টার হাড়-পাঁজর, ভিতরে থৈথৈ করছে শত ঝর্ণার জল।
আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি। শোনো। পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালোবেসেছিলো মেঘকে আর মেঘ কি ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা সে তো আগেই শুনেছো। সেদিন ছিলো পাহাড়টার জন্মদিন। পাহাড় মেঘকে বললে – আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে। মেঘ পাহাড়কে বললে – আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে। ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ। সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে পাহাড় ছিলো মেঘের ঢেউ-জলে। হঠাৎ, আকাশ জুড়ে বেজে উঠলো ঝড়ের জগঝম্প ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাই এর ভঙ্গিতে ছুটে এল এক ঝাঁক হাওয়া মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে – ওঠ্ ছুঁড়ি! তোর বিয়ে । এখনো শেষ হয়নি গল্পটা। বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেলো ঠিকই কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিন ভুলতে পারলনা। বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো পাহাড়টার হাড়-পাঁজর, ভিতরে থৈথৈ করছে শত ঝর্ণার জল।
মিথিলার চিঠি
অনন্ত,
মেহেদী পাতা দেখেছো নিশ্চয়ই। ওপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত। নিজেকে আজকাল বড় বেশী মেহেদী পাতার মতো মনে হয় কেন? ওপরে আমি অথচ ভেতরে কষ্টের যন্ত্রণার এমন সব বড় বড় গর্ত যে, তার সামনে দাঁড়াতে নিজেরই ভয় হয় অনন্ত। তুমি কেমন আছো? বিরক্ত হচ্ছো না তো? ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত আমার জানা ছিলো না। তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দ্যুতি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভেতর আমার বাহির। আমারই হাতে গড়া আমার পৃথিবী।
অনন্ত, যে মিথীলা সুখী হবে বলে ভালোবাসার পূর্ণ চন্দ্র গিলে খেয়ে ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেলো আজন্ম শূণ্য অনন্তকে আরো শূণ্য করে দিয়ে তার মুখে এসব কথা মানায় না আমি জানি। কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না। আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত। উদাস দুপুরে বাতাসে শীষ দেয় তোমার সেই ভালোবাসা, পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতন তোমারই স্মৃতি, আমি আগলাতেও পারি না, আমি ফেলতেও পারি না। সুখী হতে চেয়ে এখন দেখি দাঁড়িয়ে আছি একলা আমি; কষ্টের তুষার পাহাড়ে।
অনন্ত, তোমার সামনে দাড়ানোর কোনো যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই, তবুও ... তবুও তুমিই একদিন বলেছিলে, "ভেজা মেঘের মতো অবুঝ আকাশে উড়তে উড়তে জীবনের সুতোয় যদি টান পড়ে কখনো, চলে এসো ... চলে এসো, বুক পেতে দেবো, আকাশ বানাবো আর হাসনুহেনা ফোটাবো"।
সুতোয় আমার টান পড়েছে অনন্ত, তাই আজ আমার সবকিছু, আমার একরোখা জেদ, তুমিহীন সুখী হওয়ার অলীক স্বপ্ন, সব ... সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে তোমার সামনে আমি নতজানু। আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও। কথা দিচ্ছি তোমার অমর্যাদা হবে না কোনোদিন। অনন্ত, আমি জানি, এখন তুমি একলা পাষাণ কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও। প্রচন্ড এক অভিমানে ক্ষণে ক্ষণে গর্জে ওঠে অগ্নিগিরি। কেউ জানে না, আমি জানি। কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না। ঘরের মাঝে ঘর থাকে না। উঠোন জোড়া রূপোর কলস, তুলসী তলের ঝরা পাতা, কুয়োতলার শূণ্য বালতি; বাসন-কোসন, পূর্ণিমা আর অমাবস্যা, একলা ঘরে এই অনন্ত, একা একা শুয়ে থাকা, কেউ জানে না, আমি জানি। কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে? সব হারিয়ে বুকের তলের চিতানলে, কেন তুমি নষ্ট হলে? কার বিহনে চুপি চুপি ধীরে ধীরে, কেউ জানে না আমি জানি, আমিই জানি।
আগামী শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি। অনন্ত, আমায় আর কিছু না দাও, অন্তত শাস্তিটুকু দিও। ভালো থেকো।
তোমারই হারিয়ে যাওয়া,
মিথীলা
এ জীবন আমার নয়
মহাদেব সাহা
----------------
এ জীবন আমার নয়, আমি বেঁচে আছি
অন্য কোনো পাখির জীবনে,
কোনো উদ্ভিদের জীবনে আমি বেঁচে আমি
লতাগুল্ম-ফুলের জীবনে;
মনে হয় চাঁদের বুকের কোনো আদিম পাথার আমি
ভস্মকণা,
ভাসমান একটু শ্যাওলা আমি;
এই যে জীবন দেখছো এ জীবন আমার নয়
আমি বেঁচে আছি বৃক্ষের জীবনে,
পাখি, ফুল, ঘাসের জীবনে।
আমি তো জন্মেই মৃত, বেঁচে আছি
অন্য এক জলের উদ্ভিদ-
আমার শরীর এইসব সামদ্রিক প্রাণীদের
সামান্য দেহের অংশ,
আমি কোটি কোটি বছরের পুরাতন একটি
বৃক্ষের পাতা
একবিন্দু প্রাণের উৎস, জীবনের
সামান্য একটি কোষ;
এ জীবন আমার নয় আমি সেইসব অন্তহীন
জীবনের একটি জীবন,
আমি বেঁচে আছি অন্য জীবনে, অন্য
স্বপ্ন-ভালোবাসায়।
মনে পড়ে
মহাদেব সাহা
-------
এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ, জলের ধারা কেমন ছিলো- সেসব কথাই মনে পড়ে; এখন শুধু মনে পড়ে, নদীর কথা মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে, এখন এই গভীর রাতে মনে পড়ে তোমার মুখ, তোমার ছায়া, তোমার বাড়ির ভেতর-মহল, তোমার উঠোন, সন্ধ্যাতারা এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে; তোমার কথা মনে পড়ে অনেক কথা মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে; এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে আকাশে মেঘ থেকে থেকে এখন বুঝি বৃষ্টি ঝরে।
এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ, জলের ধারা কেমন ছিলো- সেসব কথাই মনে পড়ে; এখন শুধু মনে পড়ে, নদীর কথা মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে, এখন এই গভীর রাতে মনে পড়ে তোমার মুখ, তোমার ছায়া, তোমার বাড়ির ভেতর-মহল, তোমার উঠোন, সন্ধ্যাতারা এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে; তোমার কথা মনে পড়ে অনেক কথা মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে; এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে আকাশে মেঘ থেকে থেকে এখন বুঝি বৃষ্টি ঝরে।
শূন্যের ভিতরে ঢেঊ
শঙ্খ ঘোষ
..............
বলিনি কখনো? আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে। এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে সেই এক বলা কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়ো কোনো ভাষা নেই কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে যতদূর মুছে নিতে জানে দীর্ঘ চরাচর তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই। কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম সকলেই চেয়েছে আশ্রয় সেকথা বলিনি? তবে কী ভাবে তাকাল এতদিন জলের কিনারে নিচু জবা? শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে সেকথা জানো না?
..............
বলিনি কখনো? আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে। এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে সেই এক বলা কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়ো কোনো ভাষা নেই কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে যতদূর মুছে নিতে জানে দীর্ঘ চরাচর তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই। কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম সকলেই চেয়েছে আশ্রয় সেকথা বলিনি? তবে কী ভাবে তাকাল এতদিন জলের কিনারে নিচু জবা? শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে সেকথা জানো না?
শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬
দীর্ঘশ্বাসের পাখি
সোহরাব হাসান
............
আমার দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে বড় কোনো সড়ক নেই এই শহরে তুমি যে পথে যাবে, যে গলিতে পা রাখবে বলে মনস্থির করেছ; সেখানেই আমাকে পাবে। আমি ছায়াহীন মানুষ সহস্র আলোকবর্ষ ঠায় দাঁড়িয়ে আছি আমি তোমাদের আলোঝলমলে এ শহরে কোনো ছাড়পত্র নিয়ে আসিনি, অর্বাচীনের মতো ঢুকে পড়েছি। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো আকাশ নেই অথচ তোমরা আকাশের চেয়ে কংক্রিট নিয়ে মেতে থাকো মৃত্তিকালীন মানুষের চেহারা ভীষণ অপছন্দ তোমাদের বলো, আমি যদি আঁধারকে কাছে টেনে না নিতাম তোমরা আলো চিনতে কী করে? তোমরা কেউ আমার কষ্ট বুঝলে না , হয়তো আমিও তোমাদের অনুভবের সাগর ছুঁতে পারিনি। অনুতাপহীন মানুষের দেশে আমি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেঁচে আছি।
আমার দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে বড় কোনো সড়ক নেই এই শহরে তুমি যে পথে যাবে, যে গলিতে পা রাখবে বলে মনস্থির করেছ; সেখানেই আমাকে পাবে। আমি ছায়াহীন মানুষ সহস্র আলোকবর্ষ ঠায় দাঁড়িয়ে আছি আমি তোমাদের আলোঝলমলে এ শহরে কোনো ছাড়পত্র নিয়ে আসিনি, অর্বাচীনের মতো ঢুকে পড়েছি। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো আকাশ নেই অথচ তোমরা আকাশের চেয়ে কংক্রিট নিয়ে মেতে থাকো মৃত্তিকালীন মানুষের চেহারা ভীষণ অপছন্দ তোমাদের বলো, আমি যদি আঁধারকে কাছে টেনে না নিতাম তোমরা আলো চিনতে কী করে? তোমরা কেউ আমার কষ্ট বুঝলে না , হয়তো আমিও তোমাদের অনুভবের সাগর ছুঁতে পারিনি। অনুতাপহীন মানুষের দেশে আমি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেঁচে আছি।
সে তোমাকে পাবে না।
মইনুল আহসান সাবের
................
একা একা ভালবেসে এইভাবে বেড়ে যায় পাপ, তুমি কোনদিন দেখবেনা, তার দুঃখ অনুস্তাপ। কোন কোন মাঝ রাতে বৃষ্টি হবে, সে তখন তোমাকে পাবেনা। বৃষ্টি যেমন ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর বস্ত্র হরণ করে, টানে টানে খসে যায় আবরণ, পরে থাকে বিশুদ্ধ যৌবন ঠিক সেই ভাবে বস্ত্র হরণ করেও, সে তোমাকে পাবেনা। কোন কোন দুপুরে নীল আকাশে ভেসে যাবে একা চিল, সে তখন তোমাকে পাবেনা। আকাশের মত বিস্তৃত করেও, সে তোমাকে পাবেনা। সে তোমার ঠোঁট ছোঁবে, স্তনাগ্র, তোমার চিবুক, তবু মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে তুমি তার হবেনা। তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে কেন তুমি ভেসে যাও কে তোমায় বাজায় তখন, কার কন্ঠে গান গায় একান্তের স্মৃতি, কোন সে হাত এসে সিঁথি কাটে তোমার চুলে, তোমাকে শয্যা থেকে তুলে নেয়, তোমাকে তোমার শরীর থেকে তুলে নেয়, কোন সে পুরুষ? তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, বোঝেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টির অর্থ, জানেনা নির্জন করিডোরে নতজানু এক নিঃসঙ্গ যুবক, তোমাকে মাঝরাতে বৃষ্টির কথা বলেছিল, তোমার চমকিত চোখে বরিষন দেখেছে সে, বলেছিল তোমার নিজস্ব পুরুষ সে তো জানেনা, নিজস্ব ছাড়িয়ে আরো কিছু থাকে।
একা একা ভালবেসে এইভাবে বেড়ে যায় পাপ, তুমি কোনদিন দেখবেনা, তার দুঃখ অনুস্তাপ। কোন কোন মাঝ রাতে বৃষ্টি হবে, সে তখন তোমাকে পাবেনা। বৃষ্টি যেমন ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর বস্ত্র হরণ করে, টানে টানে খসে যায় আবরণ, পরে থাকে বিশুদ্ধ যৌবন ঠিক সেই ভাবে বস্ত্র হরণ করেও, সে তোমাকে পাবেনা। কোন কোন দুপুরে নীল আকাশে ভেসে যাবে একা চিল, সে তখন তোমাকে পাবেনা। আকাশের মত বিস্তৃত করেও, সে তোমাকে পাবেনা। সে তোমার ঠোঁট ছোঁবে, স্তনাগ্র, তোমার চিবুক, তবু মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে তুমি তার হবেনা। তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে কেন তুমি ভেসে যাও কে তোমায় বাজায় তখন, কার কন্ঠে গান গায় একান্তের স্মৃতি, কোন সে হাত এসে সিঁথি কাটে তোমার চুলে, তোমাকে শয্যা থেকে তুলে নেয়, তোমাকে তোমার শরীর থেকে তুলে নেয়, কোন সে পুরুষ? তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, বোঝেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টির অর্থ, জানেনা নির্জন করিডোরে নতজানু এক নিঃসঙ্গ যুবক, তোমাকে মাঝরাতে বৃষ্টির কথা বলেছিল, তোমার চমকিত চোখে বরিষন দেখেছে সে, বলেছিল তোমার নিজস্ব পুরুষ সে তো জানেনা, নিজস্ব ছাড়িয়ে আরো কিছু থাকে।
লোকেন বোসের জর্নাল
জীবনানন্দ দাশ
..............
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি — এখনো কি ভালোবাসি? সেটা অবসরে ভাববার কথা, অবসর তবু নেই; তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না। পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে: সুজাতা লিখেছে আমার কাছে, বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে-সব কথা; ফাইল নাড়া কি যে মিহি কেরানীর কাজ; নাড়বো না আমি নেড়ে কার কি লাভ; মনে হয় অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব, সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে মানে এই — অমিতা বলছি যাকে — কিন্তু কথাটা থাক; কিন্তু তবুও — আজকে হৃদয় পথিক নয়তো আর, নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো — তবে এখন কি করে মন কারভান হবে। প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৼ সিমুমে হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি, হৃদয়, হৃদয় তুমি! তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে সেখানে বালির সৼ নিরবতা ধূ ধূ প্রেম নয় তবু প্রমেরই মতন শুধু। অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে? অমিতা নিজে কি তাকে? অবসর মতো কথা ভাবা যাবে, ঢের অবসর চাই; দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই এখনি টেনিসে যেতে হবে তবু, ফিরে এসে রাতে ক্লাবে; কখন সময় হবে। হেমন্তে ঘাসে নীল ফুল ফোঁটে — হৃদয় কেন যে কাঁপে, 'ভালোবাসতাম' — স্মৃতি — অঙ্গার — পাপে তর্কিত কেন রয়েছে বর্তমান। সে-ও কি আমায় — সুজাতা আমায় ভালোবেসে ফেলেছিলো? আজো ভালোবাসে নাকি? ইলেকট্রনেরা নিজ দোষগুনে বলয়িত হয়ে রবে; কোনো অন্তিম ক্ষালিত আকাশে এর উত্তর হবে? সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে; অমিতা কি মিহিজামে? বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে — সবই। ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে; সময়ের এই স্থির এক দিক, তবু স্থিরতর নয়; প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।
..............
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি — এখনো কি ভালোবাসি? সেটা অবসরে ভাববার কথা, অবসর তবু নেই; তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না। পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে: সুজাতা লিখেছে আমার কাছে, বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে-সব কথা; ফাইল নাড়া কি যে মিহি কেরানীর কাজ; নাড়বো না আমি নেড়ে কার কি লাভ; মনে হয় অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব, সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে মানে এই — অমিতা বলছি যাকে — কিন্তু কথাটা থাক; কিন্তু তবুও — আজকে হৃদয় পথিক নয়তো আর, নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো — তবে এখন কি করে মন কারভান হবে। প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৼ সিমুমে হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি, হৃদয়, হৃদয় তুমি! তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে সেখানে বালির সৼ নিরবতা ধূ ধূ প্রেম নয় তবু প্রমেরই মতন শুধু। অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে? অমিতা নিজে কি তাকে? অবসর মতো কথা ভাবা যাবে, ঢের অবসর চাই; দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই এখনি টেনিসে যেতে হবে তবু, ফিরে এসে রাতে ক্লাবে; কখন সময় হবে। হেমন্তে ঘাসে নীল ফুল ফোঁটে — হৃদয় কেন যে কাঁপে, 'ভালোবাসতাম' — স্মৃতি — অঙ্গার — পাপে তর্কিত কেন রয়েছে বর্তমান। সে-ও কি আমায় — সুজাতা আমায় ভালোবেসে ফেলেছিলো? আজো ভালোবাসে নাকি? ইলেকট্রনেরা নিজ দোষগুনে বলয়িত হয়ে রবে; কোনো অন্তিম ক্ষালিত আকাশে এর উত্তর হবে? সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে; অমিতা কি মিহিজামে? বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে — সবই। ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে; সময়ের এই স্থির এক দিক, তবু স্থিরতর নয়; প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।
চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা
নির্মলেন্দু গুণ
................
চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা নদীর জল তোমাকে যেভাবে পেয়েছে আমি সেভাবে পাই নি! লাক্স সাবান যেভাবে তোমাকে ছুঁয়েছে আমি সেভাবে ছুঁইনি। মেডলিন লিপস্টিক যেভাবে তোমাকে চুমু খেয়েছে আমি সে সুযোগ পাই নি। প্রসাধন ঘরের চারদেয়াল তোমাকে যেভাবে দেখেছে আমি সেভাবে তোমাকে দেখিনি। গাঢ় অন্ধকার যেভাবে তোমাকে আলিঙ্গন করেছে আমি তো তা পারি নি। দিনের আলো যেভাবে তোমাকে দূরে সরিয়েছে আমি সে প্রশ্রয় পাই নি বেসিনের জল যেভাবে তোমার হাত ধরেছে আমি সে সুযোগও পাই নি তোমার হাতের বই বুক পর্যন্ত যেভাবে গড়িয়েছে দেখে তো আমার ঈর্ষাই হয়েছে এভাবে স্পর্শকাতর কবি ঈর্ষাকাতর হয়েছে করেছে ভ্রমণ স্বপ্নের ভিতর ঘুরেছে ঘোরে ঘোর ঘোরতর। ম্যাক্সির ভিতর যেভাবে তুমি ঢুকেছো আমার আলিঙ্গনে সেভাবে তুমি আসো নি রাতের আকাশ যেভাবে তোমাকে দেখেছে বৃষ্টির জল যেভাবে তোমাকে জড়িয়েছে দিনের সূর্য যে উত্তাপ তোমাকে দিয়েছে তোমার শরীরে পৃথিবীর পরে আমি সে সুযোগ পাই নি। ভোরের বায়ু তোমার এলায়িত চুলে যেভাবে হাত বুলিয়েছে এই কবি কি সে সুযোগ পেয়েছে? ভিনদেশী পারফিউম তোমার গাঁয়ে যেভাবে গন্ধ মেখেছে এই কবি কি তা পেরেছে?
চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা নদীর জল তোমাকে যেভাবে পেয়েছে আমি সেভাবে পাই নি! লাক্স সাবান যেভাবে তোমাকে ছুঁয়েছে আমি সেভাবে ছুঁইনি। মেডলিন লিপস্টিক যেভাবে তোমাকে চুমু খেয়েছে আমি সে সুযোগ পাই নি। প্রসাধন ঘরের চারদেয়াল তোমাকে যেভাবে দেখেছে আমি সেভাবে তোমাকে দেখিনি। গাঢ় অন্ধকার যেভাবে তোমাকে আলিঙ্গন করেছে আমি তো তা পারি নি। দিনের আলো যেভাবে তোমাকে দূরে সরিয়েছে আমি সে প্রশ্রয় পাই নি বেসিনের জল যেভাবে তোমার হাত ধরেছে আমি সে সুযোগও পাই নি তোমার হাতের বই বুক পর্যন্ত যেভাবে গড়িয়েছে দেখে তো আমার ঈর্ষাই হয়েছে এভাবে স্পর্শকাতর কবি ঈর্ষাকাতর হয়েছে করেছে ভ্রমণ স্বপ্নের ভিতর ঘুরেছে ঘোরে ঘোর ঘোরতর। ম্যাক্সির ভিতর যেভাবে তুমি ঢুকেছো আমার আলিঙ্গনে সেভাবে তুমি আসো নি রাতের আকাশ যেভাবে তোমাকে দেখেছে বৃষ্টির জল যেভাবে তোমাকে জড়িয়েছে দিনের সূর্য যে উত্তাপ তোমাকে দিয়েছে তোমার শরীরে পৃথিবীর পরে আমি সে সুযোগ পাই নি। ভোরের বায়ু তোমার এলায়িত চুলে যেভাবে হাত বুলিয়েছে এই কবি কি সে সুযোগ পেয়েছে? ভিনদেশী পারফিউম তোমার গাঁয়ে যেভাবে গন্ধ মেখেছে এই কবি কি তা পেরেছে?
খনার বচন
খনার বচন
জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে। এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত। • কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার। • কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। • আবহাওয়া জ্ঞান। • শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।
“ চালায় চালায় কুমুড় পাতা
“ দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
“ সোমে ও বুধে না দিও হাত
“ শুনরে বাপু চাষার বেটা
“ পারেনা ল ফালাইতে
“ সূর্যের চেয়ে বালি গরম!!
“ হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
“ মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
“ যদি থাকে বন্ধুরে মন
“ কাল ধানের ধলা পিঠা,
“ পরের বাড়ির পিঠা
“ ঘরের কোনে মরিচ গাছ
“ সোল বোয়ালের পোনা,
“ ছায়া ভালো ছাতার তল,
“ যা করিবে বান্দা তা-ই পাইবে।
“ তেলা মাথায় ঢালো তেল,
“ চৈত্রে চালিতা,
“ মিললে মেলা।
“ সাত পুরুষে কুমাড়ের ঝি,
“ না পাইয়া পাইছে ধন;
“ কাচায় না নোয়ালে বাশ,
“ যুগরে খাইছে ভূতে
“ দশে মিলে করি কাজ
“ যাও পাখি বলো তারে
“ ফুল তুলিয়া রুমাল দিলাম যতন করি রাখিও।
“ একে তে নাচুনী বুড়ি,
“ চোরের মার বড় গলা
“ ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
“ জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
“ যদি হয় সুজন
“ হাতিরও পিছলে পাও।
“ গাঙ দেখলে মুত আসে
“ ক্ষেত আর পুত।
“ গরু ছাগলের মুখে বিষ।
“ আকাশে কোদালীর বাউ।
“ যদি ঝরে কাত্তি।
“ আষাঢ়ের পানি।
“ গাঁ গড়ানে ঘন পা।
“ যে চাষা খায় পেট ভরে।
“ গরুর পিঠে তুললে হাত।
“ দিন থাকতে বাঁধে আল।
“ মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
“ যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
“ খনা বলে শুন কৃষকগণ হাল লয়ে মাঠে বেরুবে যখন
“ ভরা হতে শুন্য ভাল যদি ভরতে যায়,
“ কি করো শ্বশুর লেখা জোখা,
“ বার বছরে ফলে তাল,
“ এক পুরুষে রোপে তাল,
“ নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
“ চৈত্রেতে থর থর
“ সাত হাতে, তিন বিঘাতে
“ দিনের মেঘে ধান,
“ চৈতে গিমা তিতা, বৈশাখে নালিতা মিঠা,
“ তিন নাড়ায় সুপারী সোনা,
“ আম লাগাই জাম লাগাই
“ তাল, তেঁতুল, কুল
“ ঘোল, কুল, কলা
“ আম নিম জামের ডালে
“ সকল গাছ কাটিকুটি
“ শাল সত্তর, আসন আশি
“ পূর্ণিমা আমাবস্যায় যে ধরে হাল, তার দুঃখ হয় চিরকাল।
“ ভাদরের চারি আশ্বিনের চারি,
“ মাঘে মুখী, ফাল্গুনে চুখি,
“ সরিষা বনে কলাই মুগ,
“ গোবর দিয়া কর যতন,
“ তিনশ ষাট ঝাড় কলা রুয়ে
“ বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়,
“ শুনরে বেটা চাষার পো, বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো।
“ বাড়ীর কাছে ধান পা,
“ তপ্ত অম্ল ঠাণ্ডা দুধ
“ ডাক দিয়ে বলে মিহিরের স্ত্রী, শোন পতির পিতা,
“ পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল।
“ ঘন সরিষা বিরল তিল।
জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে। এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত। • কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার। • কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। • আবহাওয়া জ্ঞান। • শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।
“ চালায় চালায় কুমুড় পাতা
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা। ”
“ দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
কমে না বাড়ে বারো মাস। ”
“ সোমে ও বুধে না দিও হাত
ধার করিয়া খাইও ভাত। ”
“ শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশার সফল। ”
“ পারেনা ল ফালাইতে
উইঠা থাকে বিয়ান রাইতে। ”
“ সূর্যের চেয়ে বালি গরম!!
নদীর চেয়ে প্যাক ঠান্ডা!! ”
“ হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা ”
“ মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
ছেলে নষ্ট হাটে ”
“ যদি থাকে বন্ধুরে মন
গাং সাঁতরাইতে কতক্ষণ। ”
“ কাল ধানের ধলা পিঠা,
মা'র চেয়ে মাসি মিঠা। ”
“ পরের বাড়ির পিঠা
খাইতে বড় ই মিঠা। ”
“ ঘরের কোনে মরিচ গাছ
লাল মরিচ ধরে,
তোমার কথা মনে হলে
চোখের পানি পড়ে! ”
“ সোল বোয়ালের পোনা,
যার যারটা তার তার কাছে সোনা ”
“ ছায়া ভালো ছাতার তল,
বল ভালো নিজের বল। ”
“ যা করিবে বান্দা তা-ই পাইবে।
সুই চুরি করিলে কুড়াল হারাইবে। ”
“ তেলা মাথায় ঢালো তেল,
শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল। ”
“ চৈত্রে চালিতা,
বৈশাখে নালিতা,
আষাড়ে.........
ভাদ্রে তালের পিঠা।
আর্শ্বিনে ওল,
কার্তিকে কৈয়ের ঝুল ”
“ মিললে মেলা।
না মিললে একলা একলা ভালা! ”
“ সাত পুরুষে কুমাড়ের ঝি,
সরা দেইখা কয়, এইটা কি? ”
“ না পাইয়া পাইছে ধন;
বাপে পুতে কীর্তন। ”
“ কাচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাস ঠাস! ”
“ যুগরে খাইছে ভূতে
বাপরে মারে পুতে ”
“ দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ। ”
“ যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভুলেনা মোরে ”
“ ফুল তুলিয়া রুমাল দিলাম যতন করি রাখিও।
আমার কথা মনে ফইল্লে রুমাল খুলি দেখিও। ”
“ একে তে নাচুনী বুড়ি,
তার উপর ঢোলের বারি ”
“ চোরের মার বড় গলা
লাফ দিয়ে খায় গাছের কলা ”
“ ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
যদি ও পৃথক হয়, নারীর কারন। ”
“ জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা। ”
“ যদি হয় সুজন
এক পিড়িতে নয় জন।
যদি হয় কুজন
নয় পিড়িতে নয় জন ”
“ হাতিরও পিছলে পাও।
সুজনেরও ডুবে নাও। ”
“ গাঙ দেখলে মুত আসে
নাঙ দেখলে হাস আসে (নাঙ মানে - স্বামী) ”
“ ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।। ”
“ গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় রাখিস দিশ ।। ”
“ আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুড় মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজি কালি।। ”
“ যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।। ”
“ আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।। ”
“ গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দুঃখ সর্ব্বকাল। ”
“ যে চাষা খায় পেট ভরে।
গরুর পানে চায় না ফিরে।
গরু না পায় ঘাস পানি।
ফলন নাই তার হয়রানি।। ”
“ গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল। ”
“ দিন থাকতে বাঁধে আল।
তবে খায় তিন শাল।।
বারো পুত তেরো নাতি।
তবে করো বোরো খেতি।। ”
“ মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।। ”
“ যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।। ”
“ খনা বলে শুন কৃষকগণ হাল লয়ে মাঠে বেরুবে যখন
শুভ দেখে করবে যাত্রা না শুনে কানে অশুভ বার্তা।
ক্ষেতে গিয়ে কর দিক নিরূপণ, পূর্ব দিক হতে হাল চালন নাহিক সংশয় হবে ফলন। ”
“ ভরা হতে শুন্য ভাল যদি ভরতে যায়,
আগে হতে পিছে ভাল যদি ডাকে মায়।
মরা হতে তাজা ভাল যদি মরতে যায়,
বাঁয়ে হতে ডাইনে ভাল যদি ফিরে চায়।
বাঁধা হতে খোলা ভাল মাথা তুলে চায়,
হাসা হতে কাঁদা ভাল যদি কাঁদে বাঁয়। ”
“ কি করো শ্বশুর লেখা জোখা,
মেঘেই বুঝবে জলের রেখা।
কোদাল কুড়ুলে মেঘের গাঁ,
মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা।
কৃষককে বলোগে বাঁধতে আল,
আজ না হয় হবে কাল। ”
“ বার বছরে ফলে তাল,
যদি না লাগে গরু নাল। ”
“ এক পুরুষে রোপে তাল,
অন্য পুরুষি করে পাল।
তারপর যে সে খাবে,
তিন পুরুষে ফল পাবে। ”
“ নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
বদ্যি বাড়ি নাহি যাও। ”
“ চৈত্রেতে থর থর
বৈশাখেতে ঝড় পাথর
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে। ”
“ সাত হাতে, তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। ”
“ দিনের মেঘে ধান,
রাতের মেঘে পান ”
“ চৈতে গিমা তিতা, বৈশাখে নালিতা মিঠা,
জ্যৈষ্ঠে অমৃতফল আষাঢ়ে খৈ, শায়নে দৈ।
ভাদরে তালের পিঠা, আশ্বিনে শশা মিঠা,
কার্তিকে খৈলসার ঝোল, অগ্রাণে ওল।
পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল, ফাল্গুনে পাকা বেল। ”
“ তিন নাড়ায় সুপারী সোনা,
তিন নাড়ায় নারকেল টেনা,
তিন নাড়ায় শ্রীফল বেল,
তিন নাড়ায় গেরস্থ গেল ”
“ আম লাগাই জাম লাগাই
কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি ”
“ তাল, তেঁতুল, কুল
তিনে বাস্তু নির্মূল ”
“ ঘোল, কুল, কলা
তিনে নাশে গলা। ”
“ আম নিম জামের ডালে
দাঁত মাজও কুতুহলে। ”
“ সকল গাছ কাটিকুটি
কাঁঠাল গাছে দেই মাটি। ”
“ শাল সত্তর, আসন আশি
জাম বলে পাছেই আছি।
তাল বলে যদি পাই কাত
বার বছরে ফলে একরাত। ”
“ পূর্ণিমা আমাবস্যায় যে ধরে হাল, তার দুঃখ হয় চিরকাল।
যার বলদের হয় বাত, তার ঘরে না থাকে ভাত।
খনা বলে আমার বাণী, যে চষে তার হবে জানি। ”
“ ভাদরের চারি আশ্বিনের চারি,
কলাই রোব যত পারি। ”
“ মাঘে মুখী, ফাল্গুনে চুখি,
চৈতে লতা, বৈশাখে পাতা। ”
“ সরিষা বনে কলাই মুগ,
বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক ”
“ গোবর দিয়া কর যতন,
ফলবে দ্বিগুণ ফসল রতন। ”
“ তিনশ ষাট ঝাড় কলা রুয়ে
থাকগা চাষি মাচায় শুয়ে,
তিন হাত অন্তর এক হাত খাই
কলা পুতগে চাষা ভাই। ”
“ বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়,
সে বৎসর বর্ষা হবে খনা কয়। ”
“ শুনরে বেটা চাষার পো, বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো।
আষাঢ় শাওনে নিড়িয়ে মাটি,ভাদরে নিড়িয়ে করবে খাঁটি।
হলুদ রোলে অপর কালে, সব চেষ্টা যায় বিফলে। ”
“ বাড়ীর কাছে ধান পা,
যার মার আগে ছা।
চিনিস বা না চিনিস,
ঘুঁজি দেখে কিনিস। ”
“ তপ্ত অম্ল ঠাণ্ডা দুধ
যে খায় সে নির্বোধ ”
“ ডাক দিয়ে বলে মিহিরের স্ত্রী, শোন পতির পিতা,
ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।
রাজ্য নাশে, গো নাশে, হয় অগাধ বান,
হাতে কাটা গৃহী ফেরে কিনতে না পান ধান। ”
“ উনো বর্ষায় দুনো শীত ”
“ বাঁশ মরে ফুলত, মানুষ মরে ভুলত ”
“ পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল।
য'দ্দিন কুয়া ত'দ্দিন জল।
শনিতে সাত মঙ্গলে/(বুধ) তিন।
আর সব দিন দিন ”
“ ঘন সরিষা বিরল তিল।
ডেঙ্গে ডেঙ্গে কাপাস।।
এমন করে বুনবি শন।
না লাগে বাতাস ”
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)