শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬

খনার বচন

খনার বচন

জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে। এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত। • কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার। • কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। • আবহাওয়া জ্ঞান। • শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।

“ চালায় চালায় কুমুড় পাতা
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা। ”



“ দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
কমে না বাড়ে বারো মাস। ”



“ সোমে ও বুধে না দিও হাত
ধার করিয়া খাইও ভাত। ”



“ শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশার সফল। ”



“ পারেনা ল ফালাইতে
উইঠা থাকে বিয়ান রাইতে। ”



“ সূর্যের চেয়ে বালি গরম!!
নদীর চেয়ে প্যাক ঠান্ডা!! ”




“ হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা ”



“ মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
ছেলে নষ্ট হাটে ”



“ যদি থাকে বন্ধুরে মন
গাং সাঁতরাইতে কতক্ষণ। ”



“ কাল ধানের ধলা পিঠা,
মা'র চেয়ে মাসি মিঠা। ”



“ পরের বাড়ির পিঠা
খাইতে বড় ই মিঠা। ”



“ ঘরের কোনে মরিচ গাছ
লাল মরিচ ধরে,
তোমার কথা মনে হলে
চোখের পানি পড়ে! ”


“ সোল বোয়ালের পোনা, 
যার যারটা তার তার কাছে সোনা ”



“ ছায়া ভালো ছাতার তল,
বল ভালো নিজের বল। ”



“ যা করিবে বান্দা তা-ই পাইবে।
সুই চুরি করিলে কুড়াল হারাইবে। ”



“ তেলা মাথায় ঢালো তেল,
শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল। ”



“ চৈত্রে চালিতা,
বৈশাখে নালিতা,
আষাড়ে.........
ভাদ্রে তালের পিঠা।
আর্শ্বিনে ওল,
কার্তিকে কৈয়ের ঝুল ”




“ মিললে মেলা।
না মিললে একলা একলা ভালা! ”



“ সাত পুরুষে কুমাড়ের ঝি,
সরা দেইখা কয়, এইটা কি? ”



“ না পাইয়া পাইছে ধন;
বাপে পুতে কীর্তন। ”



“ কাচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাস ঠাস! ”



“ যুগরে খাইছে ভূতে
বাপরে মারে পুতে ”



“ দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ। ”



“ যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভুলেনা মোরে ”



“ ফুল তুলিয়া রুমাল দিলাম যতন করি রাখিও।
আমার কথা মনে ফইল্লে রুমাল খুলি দেখিও। ”



“ একে তে নাচুনী বুড়ি,
তার উপর ঢোলের বারি ”



“ চোরের মার বড় গলা
লাফ দিয়ে খায় গাছের কলা ”



“ ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
যদি ও পৃথক হয়, নারীর কারন। ”




“ জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা। ”



“ যদি হয় সুজন
এক পিড়িতে নয় জন।
যদি হয় কুজন
নয় পিড়িতে নয় জন ”



“ হাতিরও পিছলে পাও।
সুজনেরও ডুবে নাও। ”



“ গাঙ দেখলে মুত আসে
নাঙ দেখলে হাস আসে (নাঙ মানে - স্বামী) ”



“ ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।। ”



“ গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় রাখিস দিশ ।। ”



“ আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুড় মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজি কালি।। ”



“ যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।। ”



“ আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।। ”



“ গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দুঃখ সর্ব্বকাল। ”



“ যে চাষা খায় পেট ভরে।
গরুর পানে চায় না ফিরে।
গরু না পায় ঘাস পানি।
ফলন নাই তার হয়রানি।। ”



“ গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল। ”



“ দিন থাকতে বাঁধে আল।
তবে খায় তিন শাল।।
বারো পুত তেরো নাতি।
তবে করো বোরো খেতি।। ”



“ মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।। ”



“ যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।। ”



“ খনা বলে শুন কৃষকগণ হাল লয়ে মাঠে বেরুবে যখন
শুভ দেখে করবে যাত্রা না শুনে কানে অশুভ বার্তা।
ক্ষেতে গিয়ে কর দিক নিরূপণ, পূর্ব দিক হতে হাল চালন নাহিক সংশয় হবে ফলন। ”



“ ভরা হতে শুন্য ভাল যদি ভরতে যায়,
আগে হতে পিছে ভাল যদি ডাকে মায়।
মরা হতে তাজা ভাল যদি মরতে যায়,
বাঁয়ে হতে ডাইনে ভাল যদি ফিরে চায়।
বাঁধা হতে খোলা ভাল মাথা তুলে চায়,
হাসা হতে কাঁদা ভাল যদি কাঁদে বাঁয়। ”



“ কি করো শ্বশুর লেখা জোখা,
মেঘেই বুঝবে জলের রেখা।
কোদাল কুড়ুলে মেঘের গাঁ,
মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা।
কৃষককে বলোগে বাঁধতে আল,
আজ না হয় হবে কাল। ”



“ বার বছরে ফলে তাল,
যদি না লাগে গরু নাল। ”



“ এক পুরুষে রোপে তাল,
অন্য পুরুষি করে পাল।
তারপর যে সে খাবে,
তিন পুরুষে ফল পাবে। ”



“ নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
বদ্যি বাড়ি নাহি যাও। ”



“ চৈত্রেতে থর থর
বৈশাখেতে ঝড় পাথর
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে। ”



“ সাত হাতে, তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। ”



“ দিনের মেঘে ধান,
রাতের মেঘে পান ”



“ চৈতে গিমা তিতা, বৈশাখে নালিতা মিঠা,
জ্যৈষ্ঠে অমৃতফল আষাঢ়ে খৈ, শায়নে দৈ।
ভাদরে তালের পিঠা, আশ্বিনে শশা মিঠা,
কার্তিকে খৈলসার ঝোল, অগ্রাণে ওল।
পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল, ফাল্গুনে পাকা বেল। ”




“ তিন নাড়ায় সুপারী সোনা,
তিন নাড়ায় নারকেল টেনা,
তিন নাড়ায় শ্রীফল বেল,
তিন নাড়ায় গেরস্থ গেল ”



“ আম লাগাই জাম লাগাই
কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি ”



“ তাল, তেঁতুল, কুল
তিনে বাস্তু নির্মূল ”



“ ঘোল, কুল, কলা
তিনে নাশে গলা। ”



“ আম নিম জামের ডালে
দাঁত মাজও কুতুহলে। ”



“ সকল গাছ কাটিকুটি
কাঁঠাল গাছে দেই মাটি। ”



“ শাল সত্তর, আসন আশি
জাম বলে পাছেই আছি।
তাল বলে যদি পাই কাত
বার বছরে ফলে একরাত। ”



“ পূর্ণিমা আমাবস্যায় যে ধরে হাল, তার দুঃখ হয় চিরকাল।
যার বলদের হয় বাত, তার ঘরে না থাকে ভাত।
খনা বলে আমার বাণী, যে চষে তার হবে জানি। ”



“ ভাদরের চারি আশ্বিনের চারি,
কলাই রোব যত পারি। ”



“ মাঘে মুখী, ফাল্গুনে চুখি,
চৈতে লতা, বৈশাখে পাতা। ”



“ সরিষা বনে কলাই মুগ,
বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক ”



“ গোবর দিয়া কর যতন,
ফলবে দ্বিগুণ ফসল রতন। ”



“ তিনশ ষাট ঝাড় কলা রুয়ে
থাকগা চাষি মাচায় শুয়ে,
তিন হাত অন্তর এক হাত খাই
কলা পুতগে চাষা ভাই। ”



“ বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়,
সে বৎসর বর্ষা হবে খনা কয়। ”



“ শুনরে বেটা চাষার পো, বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো।
আষাঢ় শাওনে নিড়িয়ে মাটি,ভাদরে নিড়িয়ে করবে খাঁটি।
হলুদ রোলে অপর কালে, সব চেষ্টা যায় বিফলে। ”



“ বাড়ীর কাছে ধান পা,
যার মার আগে ছা।
চিনিস বা না চিনিস,
ঘুঁজি দেখে কিনিস। ”



“ তপ্ত অম্ল ঠাণ্ডা দুধ
যে খায় সে নির্বোধ ”



“ ডাক দিয়ে বলে মিহিরের স্ত্রী, শোন পতির পিতা,
ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।
রাজ্য নাশে, গো নাশে, হয় অগাধ বান,
হাতে কাটা গৃহী ফেরে কিনতে না পান ধান। ”



“ উনো বর্ষায় দুনো শীত ”



“ বাঁশ মরে ফুলত, মানুষ মরে ভুলত ”



“ পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল।
য'দ্দিন কুয়া ত'দ্দিন জল।
শনিতে সাত মঙ্গলে/(বুধ) তিন। 
আর সব দিন দিন ”



“ ঘন সরিষা বিরল তিল।
ডেঙ্গে ডেঙ্গে কাপাস।।
এমন করে বুনবি শন।
না লাগে বাতাস ”




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন